জিজ্ঞাসা : ইংরেজী লাইনে পড়া-লেখার ব্যাপারে উলামাদের দৃষ্টিভংগী কি ? এ লাইনে যারা পড়াশুনা করছেন তাদের কি নিয়তে বা কিভাবে পড়াশুনা করা উচিৎ ।
জবাব : ইংরেজগণ অত্যন্ত ধূর্ত জাতি । ইংরেজগণ কখনো মুসলমানদের তারাক্বী ও উন্নতি পছন্দ করে না । এজন্য তারা উপমহাদেশে এমন এক সিলেবাস চালু করেছে যা দ্বারা একজন মুসলিম সন্তান কোন ভাবেই বুঝতে সক্ষম হয় না যে, কি তার পরিচয় ? কেন তাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে । সারা বিশ্বের কল্যাণে কি তার ভূমিকা ? অত্যন্ত সূক্ষভাবে এ সমস্ত বিষয়সমূহ থেকে তাকে একেবারে অন্ধ রাখা হয় । তার যিন্দেগীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সম্পূর্ণ দূরে রেখে পৃথিবীর অন্যান্য কাফির-বেদ্বীনের ন্যায় তার ব্রেনে এ বুঝ সৃষ্টি করা হচ্ছে যে, তুমি এ লাইনে ভালো পড়াশুনা করলে এবং ভালো ডিগ্রী হাসিল করলে বড় বড় চাকুরী ও পদ পাবে । এমন কি মন্ত্রী-মিনিস্টারও হতে পারবে । গাড়ী-বাড়ী সহ মহা আরাম-আয়েশে তোমার যিন্দেগী কাটবে । ব্যস, এতটুকুর মধ্যেই তার পড়ালেখা ও কর্মজীবন সীমাবদ্ধ । এব বাইরে তাঁর আর কোন দায় দায়িত্ব নাই । মন্ত্রী-মিনিস্টার থেকে আরাম্ভ করে একজন চেয়ারম্যান ও চাকুরীজীবীর কর্মকান্ডের দিকে লক্ষ্য করলে এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট । একজন এম,পি চিন্তাই করে না যে তার এলাকার লোকদের ঈমান-আকীদা সম্পর্কে হাশরের ময়দানে তাকে প্রশ্ন করা হবে । কুরআনে কারীম তা’লীমের ব্যাপারে তার কি ভূমিকা ছিল ? এ সম্পর্কে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে । করণ তারা যে সিলেবাস পড়ে শিক্ষিত হয়েছে তার মধ্যে এ সব কথার কোন আলোচনা নেই । মুসলমান জাতি আল্লাহ তা’আলার একমাত্র মনোনীত জাতি এবং আল্লাহ তা’আলার খাছ বাহিনী । এদের আর দশটা বেদ্বীন সম্প্রদায়ের ন্যায় আরাম-আয়েশ আর ভোগ বিলাসের জন্য দুনিয়াতে পাঠানো হয় নাই । বরং তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের জন্য । পথভ্রষ্ট লোকদের পথের দিশারী হিসাবে । এরই মধ্যে রয়েছে তার ইযযত-সম্মান দুনিয়াতে ও আখেরাতে । ইংরেজদের সিলেবাস সেই চক্ষুস্মান জাতিকে অন্ধ বানিয়েছে । বীরের জাতিকে মেষ শাবক বানিয়েছে । মুসলিম সন্তানকে বেদ্বীনদের অন্ধ অনুসারী ও তোষামোদকারী বানিয়েছে । এসব দিকে লক্ষ্য করে উলামায়ে কিরাম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, কিছু শর্তের সাথে এ লাইনে পড়াশুনা করতে পারবে । আর যারা শর্ত পালন করবে না তাদের জন্য হিতে বিপরীত এবং তার ঈমান-আমল ধ্বংসের আশংকার কারণে জায়িয হবে না ।
শর্তগুলি নিম্নরূপ
(ক) ইংরেজী লাইনে পড়াশুনা করে ইংরেজদেরকে দ্বীন-ইসলাম এর দিকে আহবান করার এবং তাদেরকে দ্বীন-ইসলাম বুঝানোর নিয়তে পড়াশুনা করবে ।
(খ) এর দ্বারা হালাল চাকুরী করে হকের উপরে থেকে হালাল রিযিক উপার্জন করবে এ নিয়ত রাখবে । হালাল রিযিক উপার্জন করা শরীয়তের নির্দেশ ।
(গ) উলামাদের সাথে উঠাবসা রেখে এবং ছুটির সময় দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে শিক্ষা সফর করে নিজে পাক্বা মু’মিন হওয়ার এবং নিজের দ্বীনদারীকে মজবুত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে । বিশেষ করে সকল কাজে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এব সুন্নতের অনুসরণ করবে । কোন ক্ষেত্রে তার সুন্নাত তরক করবে না । অন্যদেরকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিতে থাকবে ।
(ঘ) কোন ক্ষেত্রে কোন ক্রমে ইয়াহুদ-খৃষ্টান হিন্দু তথা অমুসলিমদের অনুকরণ অনুসরণ করবে না । কুরআনে কারীমে সূরায়ে মায়েদার ৭২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এদের পরিচয় এবং ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব তুলে ধরেছেন । সুতরাং এদের লেবাস-পোষাক, বেশভূষা, চাল-চলন, আখলাক-চরিত্র কোন কিছুই গ্রহণ করবে না । অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এগুলো থেকে দূরে থাকবে ।
অত্যন্ত আফসুসের সাথে বলতে হয় যে, বর্তমানে যারা ইংরেজী লাইনে পড়াশুনা করছে তাদের অধিকাংশই এ সব শর্তের ব্যাপারে একেবারেই গাফেল । তারা ইংরেজদের কি দাওয়াত দিবে, তারাই বরং ইংরেজদের দাওয়াত গ্রহণ করে । তার মধ্যে নিজের কামিয়াবী দেখছে । তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ইমাম না বানিয়ে খৃষ্টান বেদ্বীনদেরকে ইমাম বানিয়েছে ।হালাল রিযিকের কোন নিয়ত তাদের মধ্যে দেখা যায় না । এ জন্য সুদ-ঘুষ খেতে কোন দ্বিধা করছে না । ধোকা-ফাকী থেকেও পরহেয করছে না । ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের ফি/চার্জ দেখলে বুঝা যায় জনসেবার কোন নিয়তই তাদের মধ্যে নেই । শুধু নিজের গাড়ী-বাড়ী, আরাম-আয়েশই তাদের উদ্দেশ্য । দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্ব যারা আছেন তাদের অনেকে দুর্নীতিকে নীতি বানিয়ে শুধু নিজের আখের গুছাচ্ছেন । না আছে জাতীয়তা বোধ, না আছে দেশপ্রেম ও জনগণের দরদ । তাদের অধিকাংশই আলেম-উলামাদের সুহবত ইখতিয়ার করা তো দূরের কথা বরং তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে । তাদেরকে ইযযত সম্মান করাতো দূরের কথা তাদেরকে সমাজের বোঝা ভাবে । দ্বীনী ইলম বা আসল জ্ঞানকে তারা তুচ্ছ মনে করে । দাওয়াত ও তাবলীগের ফরযিয়্যাতের কোন গুরুত্ব তাদের মধ্যে নাই । যিন্দেগীর অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা খৃষ্টান ও হিন্দু ইত্যাদি অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণ অনুসরণ করে । যেমন – ধরুন আল্লাহ তা’আলার স্পেশাল বাহিনীর ইউনিফার্ম হলো মাথায় ইসলামী টুপি, চুল সুন্নাত তরীকায়, মোচ ছোট ছোট, দাড়ী একমুষ্টি পরিমাণ ও সুন্নতী লেবাস যা টাখনুর উপরে থাকবে । ইংরেজদের অনুকরণ করতে যেয়ে এখন ইংরেজী শিক্ষার্থী বা ইংরেজী শিক্ষিত মুসলমানগণ হয়তো মাথা খালী রাখে নতুবা ইংরেজদের টুপী পড়ে । চুল সামনে লম্বা রাখে অধিকাংশই দাড়ীতো রাখেই না অথচ এটা শরীয়তে ওয়াজিব এবং ঈমানের আলামত । আবার অনেকে বড় বড় মোচ রাখে যা হিন্দুদের তরীকা । টাই, টাখনোর নিচে পায়জামা বা প্যান্ট যা অমুসলিমদের লেবাস, সেটাই পরিধান করতে ভালোবাসে । এমন কি জুতাটা পর্যন্ত ইংরেজী জুতা । যা পরা ও খোলা দুনিয়াতে এক আযাব । এ সবই ইংরেজী শিক্ষার কুফল এবং তাদের অন্ধ অনুকরণের ফসল । সব চেয়ে মারাত্মক কথা যে, তাদের ঈমান-আকীদা, ধ্যান-ধারণা ও কৃষ্টি-কালচার সবই ইসলামী ভাবধারা থেকে সরে যেয়ে ইংরেজদের মত হয়ে যাচ্ছে । এমন কি শেষ পর্যন্ত অনেকে নাস্তিক হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছে । যার ডজন ডজন নমুনা সমাজের সামনে বিদ্যমান । ইংরেজী শিক্ষার এটাই যে পরিণাম এটা ধূর্ত ইংরেজগণ ভালো ভাবে জানতো যা লর্ড ম্যাকল এবং উইলিয়ম হান্টার এর লেখায় একদম স্পস্ট । এ জন্য এ শিক্ষার কুফল থেকে জাতীকে বাঁচাতে হলে এ সিলেবাসকে ইসলামী ভাবধারায় ঢেলে সাজাতে হবে যা সরকারের উপর ফরয । আর জনগণের দায়িত্ব সরকারকে এটা বুঝানো । আর ছাত্র অবিভাবকদের দায়িত্ব তারা যেন এ শিক্ষার কুফল থেকে নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য এন্টিবাইটিক হিসাবে নিজে সাথে করে ছেলেকে হাক্বানী উলামাদের সুহবতে নিয়ে যাবে । তাদের ছুটির সময় দাওয়াত ও তবলীগের মেহনতে নিয়ে যাবে । নূরাণী পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের কুরআন সহীহ ভাবে শিক্ষা দিবেন । বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের উযু, নামায, আযান, ইকামাত ইত্যাদি সহীহ করায়ে দিবেন । মেয়েদেরকে দীনদার মহিলাদের মাধ্যমে কুরআন ও নামায শিখিয়ে দিবেন । তাহলে তারা সন্তানের হক আদায় করলেন । নতুবা কুশিক্ষার কারণে সন্তানের ধ্বংসের সাথে অভিভাবকও আযাবের সম্মুখীন হবেন ।
EmoticonEmoticon