জিজ্ঞাসা : পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুর পর বর্তমানে যে সাক্ষাতকারীদের কয়েকদিন পর্যন্ত খাওয়ানো হয় বা ধুমধাম করে গরীব-ধনী সকলকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়, শরীয়তে তা জায়িয কি-না ?
জবাব : এখানে দু’টি বিষয় লক্ষ্যণীয়, একটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনদরকে সান্তনা দিতে বা তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে যারা আসে তাদেরকে মৃত ব্যক্তির বাড়িতেই খানা খাওয়ানো । আর অপরটি হচ্ছে ঈসালে সাওয়াবের নামে অনুষ্ঠান করে লোকদেরকে খাওয়ানো ।
প্রথমটির ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম হল কারো মৃত্যুর পরপরই তার পরিবার পরিজনদের কাছে যেয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা জানোনো । বিভিন্ন শান্তনার বাণী শুনানো, এটা বড় সাওয়াবের কাজ ।অবশ্য উযর থাকলে বিলম্বেও যেতে পারে । আর শান্তনা সমবেদনা জানাতে যারা আসবে তারা নিজেরাই মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্যে খানাদানা তৈরী করে নিয়ে আসা সুন্নাত ।
কিন্তু আজকাল আমাদের দেশে বদ রুসুম হয়ে গেছে যে, আত্মীয়-স্বজন যারা শান্তনা দেয়ার জন্যে আসে তাদেরকে মৃত ব্যক্তির ঘর থেকেই দাওয়াতের ন্যায় খানা পাকিয়ে খাওয়ানো হয়, এটা মাকরূহ ও নাজায়িয ।
আর ঈসালে সাওয়াবের নামে আমাদের দেশে অনেক গর্হিত কাজ রয়েছে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিদ’আত ও মনগড়া । নির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ, যেমন ত্রিশা চল্লিশা ইত্যাদি উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ ধনী-গরীব সকলের জন্যে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা, টাকার বিনিময়ে কুরআন শরীফ খতম করানো, মৃত ব্যক্তির সম্পদ বন্টন না করে ইয়াতিমদের সম্পদ থেকে দান-খয়রাত করা ইত্যাদি । এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ও তাতে যোগদান করা উভয়টাই বিদ’আত ও নাজায়িয ।
বরং সাওয়াব রিসানীর সহীহ তরীকা হচ্ছে মৃতব্যক্তির ওয়ারিসগণ ব্যক্তিগতভাবে সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে সময়ে কুরআন খতম করে দু’আ-দরুদ পাঠ করে বা নামায পড়ে সাওয়াব রিসানী করে দিবে । আর যখন যার সামর্থ হয়, নিজের মাল দ্বারা গরীব-মিসকীন, ইয়াতীম-অসহায়দেরকে খানা খাওয়াবে, কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা ইত্যাদি দান করবে । তার মাগফিরাতের উদ্দেশে সদকায়ে জারিয়াহ সহ অন্যান্য নেক কাজ করে তাকে সাওয়াব রিসানী করতে থাকবে ।
[প্রমাণ : আহসানুল ফাতাওয়া ১:৩৬১ # ফাতাওয়ায়ে শামী ২:২৪০]
EmoticonEmoticon