জিজ্ঞাসা : কোন মুসলিম রাষ্ট্রের অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারের জন্য হিন্দুদের পূজায় বা অন্য কোন ধর্মের লোকদের ধর্মীয় কাজে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়িয আছে কি-না? যদি জায়িয না থাকে, তাহলে প্রশ্ন, মুসলিম রাষ্ট্রের কিংবা ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকরাও তো মুসলমানদের ন্যায় সরকারী তহবিলে ট্যাক্স আদায় করে থাকে । তাহলে উভয় শ্রেণীর মাঝে পার্থক্যের কারণ কি ?
জবাব : ইসলামী রাষ্ট্রের অথবা মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকরা জিযিয়া বা কর প্রদান করার শর্তে যিম্মী হিসেবে সেখানে বসবাস করবে । নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের ও মুসলমানদের সমান অধিকার থাকবে । একজন মুসলমান নাগরিকের জান-মাল সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের যতটুকু দায়িত্ব, একজন যিম্মী নাগরিকের জান-মাল সংরক্ষণের ব্যাপারেও ততটুকু দায়িত্ব ।
তবে এমন রাষ্ট্রে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার অনুমতি থাকলেও তা করতে হবে গোপনে । প্রকাশ্যভাবে জাঁক-জমকের সাথে ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান তারা করতে পারবে না । কেননা,
পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে –
“নিশ্চই ইসলামই হচ্ছে আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ।”
[সূরা আল ইমরান :১৯]
সুতরাং ইসলাম ছাড়া যত ধর্ম রয়েছে, সবগুলোই বাতিল ও মিথ্যা । হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও ইয়াহুদী সহ সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে প্রতিমা পূজা আর গান-বাদ্য ছাড়া কিছু নেই যা সম্পূর্ণরূপে শিরক ও হারাম । এ সকল আচরণ অনুষ্ঠান যাদের ধর্ম, তারা নিঃসন্দেহে কাফের । এতে সন্দেহের কোন অরকাশ নেই । আর কাফেররা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু । ইসলামকে মিটানোর জন্য তারা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
সুতরাং কোন মুসলমান কিংবা মুসলমান রাষ্ট্রের সরকারের জন্য বিধর্মীদের কোন কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা কিছুতেই শরীয়ত সম্মত হবে না ।
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন-
“তোমরা কল্যাণ ও তাকওয়া তথা খোদা ভীরুতার কাজে একে অপরের সহযোগিতা কর, গুনাহ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অপরের সহযোগিতা করো না ।”
[সূরাহ মায়িদা : ২]
উক্ত আয়াতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, শরীয়ত বিরোধী কোন কাজেই সেটা যত ছোটই হোক না কেন, কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না । আর হিন্দুদের মূর্তিপূজা তো হচ্ছে প্রকাশ্য কুফরী ও ইসলাম পরিপন্থী । সুতরাং এরূপ কাজে সহযোগিতা করার প্রশ্নই উঠে না ।
কিন্তু মসজিদ, ঈদগাহ সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং কোথাও এর ব্যবস্থা না থাকলে তার ব্যবস্থা করা সরকার প্রধানের দায়িত্ব । তই বলে হিন্দু বা অমুসলিম কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করার অনুমতি নেই । এসব কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে এমন দায়িত্বও মুসলিম সরকারের নেই । তবে মুসলমান কর্তৃক অমুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা বাধা দিলে সরকার তার ক্ষতিপূরণ আদায় করবে । কিন্তু নতুনভাবে তাদের কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করতে দেয়া যাবে না ।
এখন কথা হলো, তারাও তো দেশের নাগরিক । নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে দেখা যায়, তারা যেহেতু এ দেশের নাগরিক সুতরাং এ হিসেবে ধর্মীয় কাজে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে মুসলমানদের ন্যায় মনে হতে পারে । কিন্তু এ জাতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা অবলম্বনের কোন সুযোগ ইসলামে নেই । কেননা, কোন মুসলিম রাষ্ট্রে বা ইসলামী রাষ্ট্রে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের কোন লোক বসবাস করতে আগ্রহী হলে, হয়তো তাকে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে । অন্যথায় কর আদায় করে মুসরমানদের অধীন হয়ে থাকতে হবে । এছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতা অবলম্বন করার কোন সুযোগও ইসলামে নেই । কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতা অবলম্বনের অর্থই হল ‘অন্যান্য ধর্মগুলোও সত্য । কোন ধর্মই বাতিল নয় ।’ একথা মেনে নিয়ে সকল ধর্মের সমন্বয়ে একটি মতবাদ দাঁড় করানো । যে মতবাদে সকল ধর্মের অনুসারীরা সমান অধিকারী হবে । সরকার সকল শ্রেণীর দাবী সমানভাবে আদায় করবে । এ ধরনের কোন পদ্ধতি গ্রহণ করে বিজাতীয় কোন সাম্প্রদায়ের ধর্মীয় কাজে সহযোগিতার কোন প্রশ্নই আসে না ।
[প্রমাণ : ফাতাওয়া শামী, ৪:২০৪]
EmoticonEmoticon