“এনজিও” উলামায়ে কিরামের দৃষ্টিতে ও ফাতওয়া নিয়ে এনজিওর গাত্রদাহ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর (অপসংস্কৃতি)

জিজ্ঞাসা : “শিক্ষা ও সেবার নামে খৃষ্টান মদদপুষ্ট এনজিওরা এদেশর মানুষের ঈমান ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হরণ করে চলেছে এবং এনজিওরা এদেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর”

এ হলো খৃষ্টান এনজিও গুলো সম্পর্কে এদেশের হককানী উলামাগণের মন্তব্য । কিন্তু একটি জাতীয় দৈনিক উলামাদের এ সতর্কবাণীকে ফাতাওয়াবাজী বলে আখ্যায়িত করছে । এমন কি গত কিছুদিন আগে সে দৈনিকটি ‘ফতোয়া’ শিরোনামে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করেছে । এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত জানতে চাই । 

জবাব : খৃষ্টান এনজিওরা যে এদেশের স্বাধীন-সার্বভৌমত্বের জন্য নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তা আজ এদেশের সচেতন জনতার বুঝার বাকী নেই । কিন্তু এনজিওদের এ অপতৎপরতা আড়াল করার জন্যে এদেশের কতিপয় জ্ঞানপাপী, বাম ও রাম বাবুদের নিকট মগজ বেচা কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীকে তারা পয়সার বিনিময়ে হাত করে নিয়েছে । তারা উলামায়ে হাক্কানীর এ সতর্কবাণীকে নস্যাত করে উল্টো তাদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যে আধা-পানি খেয়ে মাঠে নেমেছে । তবে আল্লাহ তা’আলার অশেষ শুকর যে, দ্বীনদার জনসাধারণ এসব এনজিও পুষ্ট বাম কলামিষ্ট ও তাদের সংবাদপত্রে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং ঈমান ও দেশের স্বার্থে সারা দেশময় আজ তারা সোচ্চার হচ্ছেন ।

সে সকল বাম কলামিষ্টদের সম্পর্কে আমরা কোন মন্তব্য করব না । তবে এনজিওরা যে আসলেই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী স্বরূপ আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত সে দৈনিকের ক্রোড় পত্রটির একজন নিবন্ধকার জনাব বদরুদ্দীন উমরের কলাম থেকেই তা অকপটে বেরিয়ে এসেছে । আমরা হুবহু তা পেশ করছি । 

তিনি লিখেন – 
“এনজিও তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য হলো – মূলতঃ গ্রামাঞ্চলের গরীব জনগণকে ঋণ দিয়ে তাদের কোন না কোন ধরনের ছোটখাটো সমবায় গঠনে সাহায্য করা । প্রাথমিক স্কৃল প্রতিষ্ঠা করে নিরক্ষরতা দূরীকরণের চেষ্টা করে এবং অনেকভাবে কিছু কিছু অর্থ সাহায্য করে তাদের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি করা যে, এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তাদের জীবন-জীবিকার উন্নতি সাধন সম্ভব । এটাই হলো তাদের পুঁজির আসল পথ । এ কাজ তারা করে পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশে যা হলো জনগণকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, কৃষক ও গ্রামীন শ্রমিক সংগঠন ইত্যাদির থেকে সরিয়ে রেখে এ দেশে শোষণ মুক্তির জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিকাশ রুদ্ধ করা । বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা এবং অন্যান্য এজেন্সীগুলো ঠিক এই উুদ্দেশেই আমাদের দেশের গরীব জনগণের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করে এনজিও নামে পরিচিত এই সব সংস্থা খাড়া করে । শুধু আমাদের দেশের নয় । বিশ্বের অসংখ্য দেশে তারা এ কাজ করে থাকে ।

এ কাজ করতে গিয়ে যে সব প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন করা দরকার, এনজিওরা সে সব কৌশল বাধ্য হয়েই অবলম্বন করে । এই কৌশলগুলোর মূল দিক হলো, আপাতঃদৃষ্টিতে কিছু জনহিতকর কাজ এমনভাবে করা যাতে তাদের আসল উদ্দেশ্য আড়ালে রেখে তারা নিজেদের তৎপরতা বজায় রাখতে পারে ।

এই জনহিতকর কাজগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কোন কোন এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রাথমিকভাবে ছোটদের এমনকি বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা । ছোটখাটো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা । স্বাস্থ্য নিয়ম সম্পর্কে মানুষকে কিছুটা সচেতন করার চেষ্টা করা । মেয়েদেরকে ঋণ দিয়ে তদের জন্য ছোটখাটো কর্মসংস্থান করা । এগুলি করার মধ্যে দিয়ে এনজিও গুলি খুব চাতুর্য়ের সাথে তাদের রাজনৈতিক কাজ করে চলে । যাদেরকে তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়, তদেরকে রাজনৈতিক সংগ্রাম থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের মধ্যে প্রচার কাজ চালায় । এ কাজ চালাতে গিয়ে তারা আবার জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত করার চেষ্টাও করে থাকে । সে কাজ করতে গিয়ে তাদেরকে বোঝায় যে, জনগণের মুক্তি কোন রাজনৈতিক দলের দ্বারা সম্ভব নয় । সম্ভব একমাত্র তাদের কর্মে । অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে নিজেদের অবস্থার উন্নতি সাধন করে ।

কিন্তু এনজিওদের এই তৎপরতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক হলেও এর ফলে গ্রামাঞ্চলে সামাজিক ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক দিক সৃষ্টি হয় । যেমন গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক ইত্যাদি ১৮% হারে অর্থাৎ অতিরিক্ত উচ্চ হারে সুদ ভিত্তিক ঋণ দেয় । প্রত্যেকের থেকে কঠোরভাবে নিয়মিত সুদে-আসলে তাদের পাওনা আদায় করে মুনাফার পাহাড় করতে থাকলেও এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের এক ধরণের কাজের সংস্থান হয় । সেটা সাময়িকভাবে হলেও এর দ্বারা তারা চিন্তার দিক থেকে এবং কার্যক্ষেত্রে কিছুটা স্বনির্ভর হতে শেখে । এ পরিবর্তন গার্মেন্ট শিল্পে নিযুক্ত নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও ঘটে । গৃহভৃত্য থেকে গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক হিসেবে নিযুক্তির ফলে একজন নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও চিন্তাগত জীবনের মধ্যে বেশ পরিবর্তন দেখা যায় । যদিও গার্মেন্টস শিল্প মালিকরা নারীদেরকে কাজ দেয় তাদের উপকারের জন্য নয় । নিজেদের মুনাফার হর বৃদ্ধির উদ্দেশেই । নারী শ্রম পুরুষ শ্রমের থেকে সস্তা হওয়ার কারণে তারা নারী শ্র্রমিক নিযুক্ত করতেই বেশী আগ্রহী । গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক ইত্যাদি সংস্থাগুলি গ্রামীণ নারীদেরকে ঋণ প্রদান করে তাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছে, এই প্রচার জোরেশোরে চালালেও তাদের এই ঋণ নীতির মূল উদ্দেশ্য যে গ্রামাঞ্চলের সস্তা নারী শ্রমকে ব্যবহার করে নিজেদের মুনাফার হার যথাসম্ভব বেশী রাখা ততে সন্দেহ নেই ।

কিন্তু আগেই বলা হয়েছে যে, এনজিওরা এসব কাজ করার সময় বাধ্যতাবশতঃ এমন কিছু কাজ করে যার একটি সীমিত ইতবাচক দিক আছে । নারীদের কিছুটা স্বনির্ভরতা অর্জন অথবা সে স্বনির্ভরতা অর্জনের আকাঙ্খা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া । স্কুলে গরীব পরিবারের ছেলেমেয়ে ও ক্ষেত্রবিশেষে বয়স্কদেরও কিছুটা শিক্ষা এবং অক্ষর জ্ঞান, স্বাস্থ্য নিয়ম সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা ইত্যাদি হল তার এই ইতিবাচক দিক । এই ইতিবাচক দিকগুলিকে সামনে রেখেই আড়ালে ও পরোক্ষভাবে তারা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশে কাজ করে এবং এদেশে প্রগতিশীল রাজনৈতিক বিকাশ রুদ্ধ করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে তৎপর থাকে ।” (দৈনিক জনকন্ঠ) ২৫ চৈত্র, ৫ পৃঃ

এ হল বাম কলামিষ্টদের বক্তব্য । আশা করি এবার এদেশের সকল স্তরের জনগণ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে, এনজিওরা এদেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ । দ্বীনদার লোকেরা তো উলামাগণের সতর্ক বাণীর দ্বারা পূর্বেই এ সত্যে উপনীত হয়েছেন । আর অবশিষ্টরা জনাব বদরুদ্দীন উমরের নিবন্ধ পাঠে এ সত্যে উপনীত হবেন বলে আমরা আশাবাদী । সুতরাং আজ দেশপ্রেমিক যে কোন সচেতন নাগরিকের জন্য কর্তব্য ইসলামের জন্য বা অন্ততঃ দেশের জন্যে হলেও এনজিওদের ওকালতী বন্ধ করা ।

Previous
Next Post »